ভ্যান চালক শহিদুল এখন পথের ভিখারী
শহিদুল ইসলাম। পেশায় ছিলেন একজন প্যাডেল ভ্যান চালক। কিন্তু একটি দূর্ঘটনায় দুই পা ও হাতের কয়েকটি আঙ্গুল হারিয়ে এখন সে পথের ভিখারী। কথা গুলো শুনতে অন্য রকম হলেও এটি বাস্তব গল্প।
জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রতিদিনের ন্যায় বাড়ি থেকে বের হয় শহিদুল ইসলাম। ভ্যান নিয়ে সাতক্ষীরা ধুলিহর এলাকায় গেলে অপর দিক থেকে আসা দ্রুতগামী ট্রলির সাথে তার সংঘর্ষ হয়। বেপরোয়া গতিতে চলা নিয়ন্ত্রণহীন যানবহন ট্রলি তাকে চাপা দেয়।
এতে সে গুরুত্বর আহত হয়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় তাকে। এরপর তার জীবন তছনছ হয়ে যায়। এত সময় বলছিলাম সাতক্ষীরা সদরের ছনকা গ্রামের রশিদুল ইসলামের ছেলে শহিদুল ইসলামের কথা। যিনি সড়ক দূর্ঘটনায় করেছেন পঙ্গুত্ব বরণ। একটি দূর্ঘটনা বদলে দিয়েছে তার জীবন। মৃত্যুর খুবই কাছ থেকে ফিরে আসেন তিনি।
শহিদুল ইসলাম জানান, একটি দূর্ঘটনা তার জীবনের সকল আশা ভরসা পালটে দিয়েছে। তাকে নামিয়ে দিয়েছে রাস্তায়। মানুষের দেওয়া অর্থ দিয়ে চলে তার সংসার। প্রতিদিন বাড়ি হতে বের হয়ে কুলিয়া, আলিপুর, সাতক্ষীরা সদর, ভোমরা সহ আশে পাশের এলকায় ভিক্ষা করেন তিনি। মানুষের দেওয়া সহযোগীতা নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরেন তিনি।
শহিদুল ইসলাম আরো বলেন, বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে তার। তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বের হন তিনি। তার নিজের ঔষধ ও পরিবারের খাবার জোগাড় করতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হয় তাকে। তিনি আরো বলেন, সড়ক দূর্ঘটনায় তার ২টি পা কেটে বাদ দিতে হয়।
সাথে হাতের কয়েকটি আঙ্গুল ফেলে দিতে হয়। আর কোমরে ১৬টি সেলাই করা হয়। ডাক্তার চেষ্টা করেও পা দুটো রক্ষা করতে পারেনি। এতে পুরোপুরি পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে তাকে। এতে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। আর তাই বেঁছে নিয়েছেন ভিক্ষা বৃত্তি। কিন্তু এতে সংসার না চলায় বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে নামতে হয়েছে কাজে।
এদিকে শহিদুল পথ চলেতে বানিয়ে নিয়েছেন একটি বিশেষ গাড়ি। একটি কাঠের তক্তার নিচে ৩টি বিয়ারিং দিয়ে ২ হাতের সাহায্যে একটি কাঠের টুকরো ভরে পথ চলেন। কখনো খেয়ে কখেনো না খেয়ে এভাবে কিলোমিটারের পর পথ চলতে হয়। পথচলা অনেক কঠিন হলেও জীবন ধারণের জন্য করতে হয় সংগ্রাম।
তাকে একটি মোটর চালিত ভ্যান প্রদান করা হলে ভিক্ষা ছেড়ে সেটি পরিচালনা করে সংসার নির্বাহ করতে পারবেন বলেও জানান তিনি। তাই সমাজের বৃত্তশালী মানুষ তার সাহায্যে এগিয়ে আসলে নতুন করে বাঁচার আশা জাগাতে পারে শহিদুলেরর পরিবারে।