লকডাউনে রোজগার কমে যাওয়ায় অনাহারে দিন কাটছে ভিক্ষুকদের
পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় যারা সার্বক্ষণিকভাবে শহরের বিভিন্ন মার্কেট, দোকান, রাস্তার মোড়, ফুটপাত কিংবা পাড়া-মহল্লায় অন্যের সাহায্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তারা এখন আগের মতো সাহায্য না পাওয়ায় অনেকের দিন কাটছে অনাহারে, অনেকেরই নেই মাথা গোঁজার ঠাই।
হুইল চেয়ারে ভর করে চলা একজন ভিক্ষুক সাহেব আলী। সাহেব আলীর বাড়ি সদর উপজেলার খুমুরিয়া এলাকায়। তিনি দীর্ঘ ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে পিরোজপুর শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্ত বর্তমানে করোনা মহামারির কারনে লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকার ফলে তিনি না খেয়ে কোন ভাবে বেঁচে আছেন।
সাহেব আলী একজন পঙ্গু মানুষ তিনি দুই পায়ে চলতে পারেন না তাই একটি ভাঙ্গা হুইল চেয়ারে ভর করে তাকে চলতে হয়। করোনার কারনে সবাই লকডাউন মেনে ঘরে থাকলেও ক্ষুধার যন্ত্রণায় রাস্তায় নেমে আসতে হয় সাহেব আলীকে কিন্ত দোকানপাট বন্ধ থাকার ফলে রাস্তায়ও মিলছে না তেমন সাহায্য তাই খালি হাতেই ফিরে যেতে হয় তাকে এমনটাই বলছিলেন পঙ্গু ভিক্ষুক সাহেব আলী।
পঙ্গু ভিক্ষুক সাহেব আলী জানান, লকডাউনে সবকিছু বন্ধ ছিলো তাই কেউ তেমন সাহায্য দেয়নি ফলে অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে কোন মতে বেঁচে আছি। কেউ কোন খোজ খবর নেয়নি দেয় কোন কোন ত্রানও। আল্লার দিন কোন ভঅবে চলে যাচ্ছে। একটি হুইল চেয়ার ছাড়া আমার আর কিছু নাই। একজনের বাড়িতে একটি কুড়ে ঘরে কোনমতে থাকি। আমার স্ত্রী বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছে তিনকুলে আমার কেউ নাই। অভাবের কারনে জীবন যেন আর চলে না। লকডাউনের কারনে কখনো খেয়ে আবার কখনো শুধু পানি খেয়ে সময় পার করছি দেখার কেউ নাই।
শুধু সাহেব আলী নয় খুমুরিয়া এলাকার প্রতিবন্ধি ইউসুফ, বেকুটিয়া এলাকার আঃ রহিম সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় এমন অনেক ভিক্ষুক ও অসহায় মানুষ রয়েছেন যারা লকডাউনে দু’বেলা খেতে পর্যন্ত পারেন না। এসব মানুষদের হাহাকার যেনো ইট পাথরের দেয়াল ভেদ করে প্রশাসন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও উচ্চবৃত্তদের কাছে পৌঁছাতে পারেনা। এসকল প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, অসহায় মানুষদের একটাই দাবী দুবেলা একটু খাবার আর একটু মাথা গোজার জায়গা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর অনেকেই পেলেও এসব অসহায় মানুষদের কেউ পাননি প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘর। পিরোজপুর জেলাতে প্রথম ধাপে ১ হাজার ১শত ৭৫টি এবং দ্বিতীয় ধাপে ২ হাজার ৪ টি ঘর দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে সদর উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮৫টি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৩০০ টি ঘর দেয়া হয়েছে। প্রথম ধাপের ঘর সকলকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে এবং দ্বিতীয় ধাপের ৪০ শতাংশ ঘর দেয়া হয়েছে। এরপরেও অনেক অসহায় দরিদ্র ভিক্ষুক পায়নি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। ফলে তারা কোন মতে কুঁড়েঘরে বসবাস করে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, করোনা মহামারীর কারনে পরিবহন শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিককে ২ হাজার ৫ শত টাকা করে দেয়া হবে। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে জেলায় ৫০ হাজার ৮ শত ৫০ জনকে ঈদ উপহার হিসেবে বিশেষ ভিজিএফ ৪৫০ টাকা করে দেয়া হবে। এরপরেও যারা অসহায় দরিদ্র মানুষ রয়েছেন তাদেরকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে।