শতবর্ষ পেরিয়ে আজও বাঙালির আপনজন সত্যজিত রায়
ফ্রেমে ফ্রেম বলতেন গল্প। দৃশ্যপটে ২০ শতকের বাঙালি জীবনের কাব্য রচনা করেছেন অবলীলায়। আলো-রঙের সে খেলায় বুঁদ হয়নি কে? নিজেকেই শুধু নয়, বিশ্ব চলচ্চিত্রের নির্মাতাদের কাছে পরিচিত করেছেন আবহমান বাংলাকে।
অনন্য সে অবদান যাকে এনে দিয়েছে বিশ্ব চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ সম্মাননা অস্কার। তিনি সত্যজিত রায়।বাঙালি জীবনের আপনজন সত্যজিত রায়ের জন্মশতবার্ষিকী আজ রোববার (২ মে)। ১৯২১ সালের এদিনে কলকাতা শহরের খ্যাতনামা রায় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
চোখে তার অন্তহীন ক্যানভাস। লক্ষ্য দূর অন্তরীক্ষ। সীমারেখাহীন সেই চিত্র প্রাণ পেত সেুললয়েডে। মানব হৃদয়ের রহস্যগলির গোপনতম কথাটিও বড় চেনা করে তুলে আনতেন পর্দায়। সত্যজিৎ রায়ের দৃশ্যকল্পে বৈশ্বিকমাত্রা পায় বাঙালির জীবনাচরণ।
দৃশ্যায়নের অপূর্ব কৌশল কিংবা গল্প বলার মোহনীয় ঢং। ছবি শেষ, তাও অসাধারণ আবেশে বুঁদ দর্শক। মধ্যবিত্তের মনের গহিন চোরাগলির নানা মাত্রার চিত্রায়নে সত্যজিত ছিলেন অপ্রতিরোধ্য।
সাধারণ মানুষের আটপৌরে কথাই তার সিনেমায় ছন্দ পেত। তার সিনেকাব্য যুগের পর যুগ আলোড়ন তুলে যাচ্ছে বাঙালি মনঃস্তত্ত্বে।সত্যজিতের মতো করে নারীদের চোখে পৃথিবী দেখেননি কেউ। নারী হৃদয়ের কোমল কখনও বা কঠিন ভাষা সত্যজিৎই তুলে এনেছেন নিপুণতায়।
পথের পাঁচালী দিয়েই বিশ্বজয়ের শুরু তার। অপু দুর্গার সম্পর্কের রসায়নে দুর্গা বিয়োগের শোকের সমাপ্তি না ঘটতেই অপরাজিত আর অপুর সংসারে মানব হৃদয়ের নানা বৈচিত্র্য মুনশিয়ানায় তুলে আনেন।ভারতবর্ষের সত্যজিতের আত্মিকযোগ রয়েছে এ বঙ্গেও। ষোড়শী ববিতাকে বানালেন অনঙ্গ বউ। অশনি সংকেতে অদ্ভুত প্রশান্তি ও ব্যাপকতায় ববিতার এরূপ সত্যজিৎই এঁকেছিলেন দারুণভাবে।
কালকে অতিক্রম করেছেন যে কজন বাঙালি। সত্যজিৎ তার প্রথম কাতারে। সেই কাতারে সঙ্গী রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে যার যোগ মাত্র ১০ বছর বয়সেই। তাই রবীন্দ্রগল্পই যেন মূর্ত হয়ে ওঠে সত্যজিতে।৪২ বছরের কর্মজীবনের সমাপ্তি ঘটে ৭০ বছরে এসে। জীবনের অমোঘ সত্য মৃত্যুতে চলে গেলেও সত্যজিৎ সদা ক্রিয়াশীল চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মননে।